মিড অন থেকে তামিম ইকবালের সরাসরি থ্রোটা নিশ্চিত ভেঙে দিত স্টাম্প। রানআউট হয়ে যেতেন কেন উইলিয়ামসন। নিউজিল্যান্ড ৬১ রানে হারাত তৃতীয় উইকেট। ওভালের সবুজ ক্যানভাসে ভেসে উঠত বাংলাদেশ দলের জয়ের সম্ভাবনা।
কিন্তু একটি ভুল সেই সম্ভাবনাকে দিল দূরে সরিয়ে। তামিমের থ্রো সরাসরি স্টাম্প ভেঙে দেওয়ার পথে ‘বাধা’ হয়ে দাঁড়ালেন উইকেটকিপার মুশফিকুর রহিম। স্টাম্পের পেছনে না থেকে তিনি দুহাত বাড়িয়ে দিলেন সামনে। থ্রোটা টেনে এনে উইকেট ভাঙবেন বলে। উদ্দেশ্য খুবই মহৎ। কিন্তু কখনো কখনো আগ বাড়িয়ে কিছু না করে সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করা ভালো। মুশফিক ভুল করলেন ওখানেই। হাত বাড়াতে গিয়ে কনুইয়ের গুঁতো লাগিয়ে বল গ্লাভসে আসার আগেই ফেলে দিলেন বেল। ডিজিটাল স্টাম্পের রঙিন আলো জ্বলে উঠে জানিয়ে দিল, ‘বল লাগার আগেই কিন্তু আমি নড়ে গেছি!’
এমন নয় যে মুশফিক ভুলটা না করলে ওভালে কাল বাংলাদেশ দলের জয় নিশ্চিত ছিল। পরে নেওয়া দুটি দুর্দান্ত ক্যাচের জন্য তো তাঁর প্রশংসাও প্রাপ্য। কিন্তু সেই প্রশংসা ওই ভুলটাকে ঢাকতে পারছে কি? আউট থেকে বেঁচে যাওয়ার সময় উইলিয়ামসনের রান ছিল মাত্র ৮। তখন আউট হয়ে গেলে নিউজিল্যান্ডের স্কোর ২ উইকেটে ৬১ থেকে হয়ে যেত ৩ উইকেটে ৬১। অথচ ওই এক ভুলে সেই জুটি কিনা ভাঙল দলকে ১৬০ রানে নিয়ে! ৮ রানে বেঁচে যাওয়া উইলিয়ামসন করেছেন ৪০, রস টেলরের সঙ্গে মাত্র ৬ রানেই শেষ হতে যাওয়া জুটিতে শেষ পর্যন্ত এল ১০৫ রান।
ওভালের উইকেটে ২৪৪ রান খুবই দুর্বল পুঁজি। এ নিয়ে জিততে হলে বোলিং-ফিল্ডিংয়ে কোনো খুঁত রাখা যাবে না। কাজে লাগাতে হবে অর্ধেক সুযোগগুলোকেও। সেখানে সরাসরি উড়ে আসা থ্রোটাকে ছোঁ মেরে সরিয়ে নিয়ে স্টাম্পে কনুইয়ের ধাক্কা লাগিয়ে বেল ফেলে দেওয়া কোনো কাজের কথা হলো না। উইলিয়ামসন তখনই রানআউট হয়ে গেলে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা জিততই, সেটি এখন আর নিশ্চিত করে বলার উপায় নেই। তবে নিউজিল্যান্ডকে আরেকটু চাপে ফেলে জয়ের সম্ভাবনাটা তো উজ্জ্বল করা যেত! সে দায় নিতে মুশফিকেরও আপত্তি থাকার কথা নয়।
ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ‘এমন ভুল হতেই পারে’ বলে বারবারই ঢাল হয়েছেন মুশফিকের। তাহলে তাঁর চোখে কোনটি ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট? সম্ভাবনা জাগিয়েও কেন হারল বাংলাদেশ?
অধিনায়কের চোখে প্রথম কারণ, ২৫-৩০ রানের ঘাটতি। ব্যাটসম্যানরা বেশির ভাগ ২৫-৩০ করে আউট হয়ে গেছেন। সাকিব আল হাসানই (৬৪) যা একটু চেষ্টা করেছেন, কিন্তু অন্যরা যোগ্য সংগত দিতে পারেননি। বড় জুটিও হয়নি। সাকিব-মুশফিক জুটি যা একটু সম্ভাবনা দেখাচ্ছিল, ১৯ রান করে মুশফিকের রানআউটে সেটিও ধুলায় লুটালো। মাশরাফির চোখে তো ওই রানআউটই ম্যাচের ‘টার্নিং পয়েন্ট’, ‘রানআউটটাই টার্নিং পয়েন্ট। ওরা দুজনই তখন উইকেটে সেট ছিল।’ অথবা সাকিব আর মোহাম্মদ মিঠুনের পরের জুটিটাও যদি ৮০-১০০ রানের হতো! ২৫-৩০ রানের ঘাটতি দূর হয়ে যেতে পারত তখনো।
এত কিছুর পরও। নিউজিল্যান্ড ম্যাচ জিতেছে মাত্র ২ উইকেটে। মাশরাফির কথাটাই তাই ঠিক মনে হয়েছে খেলা শেষে। একপর্যায়ে রান-বলের ব্যবধান যে রকম কাছাকাছি চলে এল, তাতে সংগ্রহে আরও কিছু রান থাকলে বোলাররা হয়তো পারতেন নিউজিল্যান্ডকেও একটা ধাক্কা দিতে। কিন্তু যেদিন হয় না, সেদিন যে কিছুই হয় না!
মুশফিকের বেলায় কথাটা আরও বেশি করে সত্যি। কনুইয়ের গুঁতোয় উইলিয়ামসনকে বাঁচিয়ে দেওয়ার পর ম্যাচের ‘টার্নিং পয়েন্ট’ রানআউটের শিকারও যে হয়েছেন তিনিই!